চাবি
লিখেছেন লিখেছেন মামুন ২৮ অক্টোবর, ২০১৪, ০৮:১৫:৫৫ সকাল
ইদানিং বউমা'র সাথে খিটিমিটি লেগেই রয়েছে।
আগেও ছিল। এখন যেন একটু বেড়েছে। সালেহা বেগম নিঃশ্বাস রুদ্ধ বোবা অনুভূতিতে নীল হতে হতে ঘরের দাওয়ায় বসে ভাবতে থাকেন। উঠানের ঐ প্রান্তে কয়েকটি কাক জটলা করছে। মাটিতে পড়ে থাকা ঝোলমাখা হলুদ-সাদা ভাতগুলোর চারপাশে কাকগুলো অস্থির লোভীর মত আচরণ করছে।
নিশ্চুপ বসে থাকা সালেহা বেগমের দিকে কয়েকটি তাকায়। আবার ঠুকরে খেতে থাকে। দু'পেয়ে মানুষগুলো ওদেরকে দেখলেই কেন যে তাড়াতে এগিয়ে আসে! ওদের কাক হৃদয়ের 'কাকানুভূতি'তে এই জিনিসটি ঠিক বুঝে আসেনা। তাই ওরা সতর্ক থাকে।
একটু আগে বউমা থালা ভর্তি মাখা ভাত ওখানে বড্ড নির্মম ভাবে ফেলে গেল। সুন্দরী বউটির তীর্যক কথাগুলোও বড্ড আঘাত হানে সালেহা বেগমের মনে।
: মা, আর একটু ঝাল কম দিলে কি জাত যাইত? কি রানছেন এইগুলান? মুখেই তো দেওয়া যায় না।
সেই চিরন্তন বউ শ্বাশুড়ির দ্বন্দ।
মানুষ কত দ্রুত বদলে যায়! ভাবেন সালেহা বেগম। অথচ এই মেয়েটিকে তিনিই পছন্দ করে ছেলে রুহুলের জন্য কত শখ করে ঘরে এনেছিলেন।
সুন্দর মুখের জয় সর্বত্র। একই সাথে একটি সুন্দর মন ও যে কতটা জরুরী একটি সংসারের জন্য, তা আজ হাড়ে হাড়ে তিনি টের পাচ্ছেন।
ছেলে দিনভর পরিশ্রম শেষে রাতে ঘরে ফিরে। একটা বাসের কন্ডাক্টর। গাজীপুরের দিকে কোন রুটে যেন ডিউটি করে। আজকাল ছেলেও মায়ের দিকে কেমন করে যেন তাকায়। সেদিন তো মাকে স্পষ্ট করে বলেই দিলো,
: মা, একটু মানাইয়া চলতে শেখ। সারাদিন পর ঘরে এসে তোমাদের দুইজনের হাউকাউ আর ভালো লাগে না।
মায়ের গলার আওয়াজটাই আজকাল ছেলের কানে বাজে। বউয়ের সব কিছুই ছেলের কাছে ন্যায্য লাগে।
হবেই তো।
হবে না?
সালেহা বেগমের শেষ সম্বল তিনকাঠা জমি যেখানে টিনশেড ঘর তুলে ভাড়া দেয়া আছে, ছেলের নামে এইতো সেদিন রেজিষ্ট্রি করে দিলেন। সেই সাথে আদরের বউমার হাতে সংসারের চাবির গোছাও বুঝিয়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইলেন।
পেরেছেন কি নিশ্চিন্ত হতে?
এভাবে কি নিশ্চিন্ত হওয়া যায় এই যুগে?
সেই একইভাবেই তো এখনো রান্না করেন, যেভাবে এতগুলো বছর করে এসেছেন। একই অনুপাত... বছরের পর বছর অভ্যাসগত অভিজ্ঞতায় ধারণ করা তার হাতের রান্নার স্বাদ জগৎ সংসারে তার শেষ সম্বলটুকু দিয়ে দেয়াতেই নষ্ট হয়ে গেল ওদের দু'জনের কাছে?!
একতোড়া কতৃত্বের চাবি হাত বদলের সাথে সাথে মুখচোরা লাজুক সুন্দরী বউটির গলায় এতো ঝাঁঝ চলে আসবে, কখনো কল্পনাও করতে পেরেছিলেন কি?
কাকগুলোর দিকে অলস দৃষ্টি নিয়ে পরম মমতায় তাকিয়ে থাকেন। ওরা ঠিকই চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞ পাকা রাঁধুনির হাতের রান্নার স্বাদ উপভোগ করছে। ওদেরকে তো আর ঘরের চাবি তুলে দেননি তিনি!
বুকের গভীর থেকে বের হওয়া জমাট কষ্টগুলো দীর্ঘশ্বাসের সাথে বের হয়... চোখদুটোও বাষ্পরুদ্ধ হয়ে উঠে। আকাশে মেঘ জমেছে। মেঘ জমেছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশংকায় কেঁপে উঠা একজন সালেহা বেগমের মনেও। হৃদয়ের ঈষাণ কোণে মেঘের আনাগোনা বেড়ে চলে। ইচ্ছেগুলোর টানাপোড়েন আর ভাবালুলতায় মেঘগুলো দ্রুত পানি হয়ে দু'চোখ বেয়ে নেমে আসে।
তাতে একটুও কি হাল্কা হতে পারেন সালেহা বেগম?
একজন মা!
সংসারের চাবি হারানো এক মা নিমিষে আশ্রয়হীনায় পরিণত হলেন।
কেউ কি আছে দেখবার?
কারো কি তাতে কিছু এসে যায়?
সন্তান নামের কিছু পশুমানবকে মায়েদের নিঃস্বার্থ ভালবাসার এই বুঝি প্রতিদান!
নিজের ঘরে পরবাসী হয়ে ভাবতে থাকেন একজন সালেহা বেগম।।
... ... ... ... ...
আমরা নিজেদেরকে মুসলমান দাবি করছি, আবার একই সাথে আমাদের জনক-জননী নিজেদের বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হলে, তাদের সাথে যথেচ্ছা স্বেচ্ছাচার করছি।
আমাদের পরকালের সুখ-শান্তির চাবিকাঠি আমাদের বাবা-মা-ই।
পবিত্র কোরআনে মা বাবার প্রতি কেমন ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছে, একটু দেখে নেয়া যাক-
আল কুর'আন
( ৩১:১৪-১৫)
১৪: "আমিতো মানুষকে তার পিতামাতার সাথে ( ভালো ব্যবহারের) নির্দেশ দিয়েছি। কষ্টের পর কষ্ট করে জননী তার সন্তানকে গর্ভে ধারণ করে, আর তার দুধ ছাড়াতে ছাড়াতে দুই বছর লেগে যায়। তাই আমার প্রতি ও তোমার পিতামাতার উপর কৃতজ্ঞ হও। আমার কাছেইতো প্রত্যাবর্তন।
১৫: তোমার পিতামাতা যদি তোমাকে আমার শরিক করাতে পীড়াপীড়ি করে, যে বিষয়ে তোমার কোন জ্ঞান নেই, তুমি তাদের কথা মানবে না, তবে পৃথিবীতে তাদের সংগে সদ্ভাবে বসবাস করবে.......... "
(সূরা লুকমান)
এরপর একজন মুসলমান হিসাবে আর কোনো কিছু বুঝবার অবকাশ থাকে? নিজের পিতা-মাতা যে আমাদের জন্য কত বড় নেয়ামত, সেটি যাদের বুঝে আসে না, তাদের মত চরম হতভাগা এই পৃথিবীতে আর নেই।
আল্লাহপাক আমাদেরকে আমাদের বাবা মায়ের সর্বাবস্থায় খেদমত করার সুযোগ প্রদান করুন- আমীন।
বিষয়: বিবিধ
৯২৮ বার পঠিত, ২৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য্যে বিমোহিত হলেই ভিতরের সৌন্দর্য্যের পবিত্রতা অবহেলিত চাদরে ঢাকা পড়ে।
শেষ সময়ে তা উপলব্ধি হলেও কোন কাজে আসে না তা।
সংসারের'চাবী' হাতে পেয়েই যারা জনক/জননী কে ভুলে যায়,স্বীয় কর্তব্য-দায়িত্ব পালনে অবহেলা দেখায়,তারা সবচ্বেয়ে অধম মুর্খ। কেননা ঐ মুর্খরা ভুলে যায় যে,প্রকৃত সাফল্য-সুখের 'চাবী'মাতা-পিতার হাতেই রয়ে গেছে!যা কখনো স্হানান্তর হয় না।
আল্লাহ আমাকে সহ সকল সন্তান কে মাতা-পিতার'হক্ব'যথাযথ আদায় করার তৌফিক দিন আমিন।
দায়িত্ব জাগানিয়া অসাধারণ পোস্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ও জাযাকুমুল্লাহু খাইরান.....
অনেক ধন্যবাদ অনুভূতি রেখে যাবার জন্য।
শুভেচ্ছা রইলো।
শুভেচ্ছা রইলো।
শুভকামনা রইলো...
কাকগুলোর দিকে অলস দৃষ্টি নিয়ে পরম মমতায় তাকিয়ে থাকেন। ওরা ঠিকই চল্লিশ বছরের অভিজ্ঞ পাকা রাঁধুনির হাতের রান্নার স্বাদ উপভোগ করছে। ওদেরকে তো আর ঘরের চাবি তুলে দেননি তিনি!
অসংখ্য শুভেচ্ছা রইলো ......
আপনি নিজেকে 'আমরা'র ভিতরে কেন টেনে নিয়ে গেলেন? আপনিও তো একজন ভালো মানের সাহিত্যিক।
আপনার প্রেরণাদায়ক অনুভুতি রেখে যাবার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
সেই সাথে আপনার জন্যও রইলো অসংখ্য শুভেচ্ছা।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
সুন্দর অনুভুতি ছেড়ে গেলেন। অসংখ্য ধন্যবাদ।
শুভকামনা রইলো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মজা করে লিখেন অনেক কিছু
লেখার মাঝে শেখার আছে অনেক
যা লিখেছেন একটুও নয় মিছু।
তবে
অনেক বড় লেখক নইকো আমি
শিখছি লিখা সবে...
অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম!
সাথে থেকে অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
আমার ব্লগে আপনাকে স্বাগতম!
শুভেচ্ছা রই্লো।
জাজাকাল্লাহু খাইর।
মন্তব্য করতে লগইন করুন